বুধবার, ২ মার্চ, ২০১৬

হাফেয শিক্ষার্থীদের পুরনো কুরআন পোড়ানে বা ফেলার বিধান

কুরআনুল কারিমের পুরনো পৃষ্ঠা পোড়ানোর বিধান
কুরআনুল কারিম যদি পুরনো হয়, তার পৃষ্ঠাগুলো ছিঁড়ে যায় ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়, তাহলে এমন জায়গায় রাখা যাবে না, যেখানে অসম্মানের সম্মুখীন হয়, ময়লা-আবর্জনায় পতিত হয়, মানুষ বা জীব-জন্তু দ্বারা পিষ্ট হয়। যদি বাঁধাই করে পাঠ উপযোগী করা সম্ভব হয়, তাহলে পরিত্যক্ত না রেখে ব্যবহার করা শ্রেয়। প্রকাশক, মুদ্রাক্ষরিক বা কারো অবহেলা ও ভুলের কারণে কুরআনুল কারিম যদি ভুল মুদ্রিত হয়, তাহলে সংশোধন করে পাঠ উপযোগী করা জরুরি। পাঠ-উপযোগী করা সম্ভব না হলে অসম্মান ও বিকৃতি থেকে সুরক্ষার জন্য মুসহাফগুলো পোড়ানো কিংবা নিরাপদ স্থানে দাফন করা জরুরি। শায়খ সালেহ আল-ফাওযান বলেন: “ব্যবহার অনুপযোগী কুরআন পোড়ানো ও দাফন করা উভয় পদ্ধতি সাহাবিদের থেকে প্রমাণিত”।
পুরনো কুরআন দাফন করার সিদ্ধান্ত হলে পবিত্র স্থানে দাফন করবে, ভবিষ্যতে যেখানে অপমানের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অনেক সালফে সালেহীন রহ. তাদের পুরনো কুরআন মসজিদে দাফন করেছেন। ইমাম আহমদ রহ. বলেন: “আবুল জাওযা রাহিমাহুল্লাহর একটি কুরআন পুরনো হয়ে গিয়েছিল, অতঃপর মসজিদে গর্ত করা হয়, তিনি সেখানে তা দাফন করেন”। অতএব মসজিদ বা মসজিদের জায়গায় পুরনো কুরআন দাফন করা কোনো সমস্যা নয়।
পুরনো কুরআন সুরক্ষার দ্বিতীয় পদ্ধতি পোড়ানো। ইমাম বুখারি রহ. বর্ণনা করেন:
্রفَأَرْسَلَ عُثْمَانُ إِلَى حَفْصَةَ أَنْ أَرْسِلِي إِلَيْنَا بِالصُّحُفِ نَنْسَخُهَا فِي الْمَصَاحِفِ ثُمَّ نَرُدُّهَا إِلَيْكِ ، فَأَرْسَلَتْ بِهَا حَفْصَةُ إِلَى عُثْمَانَ ، فَأَمَرَ زَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ ، وَعَبْدَ اللَّهِ بْنَ الزُّبَيْرِ ، وَسَعِيدَ بْنَ الْعَاصِ ، وَعَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ الْحَارِثِ بْنِ هِشَامٍ ، فَنَسَخُوهَا فِي الْمَصَاحِفِ …وَأَرْسَلَ إِلَى كُلِّ أُفُقٍ بِمُصْحَفٍ مِمَّا نَسَخُوا ، وَأَمَرَ بِمَا سِوَاهُ مِنْ الْقُرْآنِ فِي كُلِّ صَحِيفَةٍ أَوْ مُصْحَفٍ أَنْ يُحْرَقَগ্ধ.
“… অতঃপর উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহার নিকট বলে পাঠান, আমার নিকট মুসহাফগুলো পাঠিয়ে দিন, আমরা তা একাধিক মুসহাফে নকল করে আপনার নিকট ফেরত পাঠাব, ফলে তিনি উসমানের নিকট তা পাঠিয়ে দেন। উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জায়েদ ইবনে সাবেত, আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের, সায়িদ ইবনে আস ও আব্দুর রহমান ইবনে হারেস ইবনে হিশামকে নির্দেশ দেন, তারা অনেক মুসহাফ তৈরি করেন… অতঃপর তাদের লিখিত এক-এক কপি তিনি প্রত্যেক অঞ্চলে প্রেরণ করেন এবং তা ব্যতীত অন্যান্য সহিফা ও মুসহাফে সংরক্ষিত কুরআন পোড়ানোর নির্দেশ দেন”।
কোনো সাহাবি উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বিরোধিতা করেননি, ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যদিও ইখতিলাফ করেছেন, কিন্তু তা কুরআন পোড়ানো সংক্রান্ত ছিল না, বরং তার ইখতিলাফ ছিল এক-ভাষার কুরআন রেখে অন্যান্য ভাষার কুরআন নিঃশেষ করা সংক্রান্ত।
পুরনো কুরআন দাফন করা অপেক্ষা পোড়ানো উত্তম। কারণ সাহাবিদের উপস্থিতিতে উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কুরাইশি ভাষা ব্যতীত অন্যান্য ভাষার কুরআন পুড়িয়েছেন। দ্বিতীয়ত দাফনকৃত কুরআনের উপর থেকে কখনো মাটি সরে অসম্মানের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই পুরনো কুরআন পোড়ানো ও পোড়ানোর পর ছাইগুলো দাফন করা অধিক শ্রেয়।
পুরনো কুরআন পানিতে ফেলার কোনো দলিল নেই, কোনো আদর্শ পূর্বপুরুষ এরূপ করেছেন মর্মে আমাদের নিকট কোনো তথ্য নেই। দ্বিতীয়ত পানিতে ভাসমান যে কোনো কাগজ ময়লা ও আবর্জনার স্থানে গিয়ে ঠেকতে পারে, তাই এ পদ্ধতি গ্রহণ করা ঠিক নয়।
শায়খ আব্দুর রহমান সুহাইম বলেন: “কুরআনুল কারিমের পুরনো ও ব্যবহার অনুপযুক্ত পৃষ্ঠা প্রযুক্তির সাহায্যে পুনরায় ব্যবহার করা বা অন্য কোনো কাজে লাগানো বৈধ নয়, বরং নিরাপদ স্থানে দাফন করা কিংবা পোড়ানো জরুরি”।
আল্লাহর নাম, কুরআনের আয়াত কিংবা দোয়া ও যিকর সংক্রান্ত কাগজের সাথে সম্মানের ব্যবহার করা জরুরি। অনুরূপ হাদিসের কিতাবের সাথে সম্মানের আচরণ করা জরুরি, যদিও তার মর্যাদা কুরআনুল কারিমের সমান নয়। অতএব রাস্তায় পরে থাকা কিংবা বাজার-সদাইয়ের কাগজে যদি আল্লাহর নাম, কুরআনের আয়াত কিংবা হাদিসের অংশ বিশেষ থাকে, দীন হিসেবে আমরা তার সাথে সম্মানের ব্যবহার করব। আল্লাহ তাওফিক দানকারী।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন